জন্মদিনের উপহার

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০১৭ , ০৪:১৭ পিএম
জন্মদিনের উপহার

অহনার মনটা আজ বড্ড খারাপ। কারণ মা বকেছেন। কেন বকেছেন? অহনা তা কাউকে বলছে না। স্কুল থেকে এসে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। টিভি দেখে না। খেলতে যায় না। প্রতিবেশি নাফসি, নাফিসা, রিমা এসে ডেকে গেছে। ওদের ডাকে কোন উত্তর দেয়নি। অপ্সরী এসেও দু`বার ডেকে গেছে। আদরের ছোটবোনের কথায়ও সাড়া দেয়নি।

 

আজ অহনার জন্মদিন। জন্মদিনে কেউ মন খারাপ করে রাখে? তবুও কী যেন এক কষ্ট লুকিয়ে রেখেছে মনের কোণে। স্কুল থেকে আসার সময় বৃষ্টিতে ভিজেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি তো আসবেই। অহনার কাছে ছাতা থাকলে আর ভিজতে হতো না। সবাই যখন ছাতা মাথায় যার যার বাড়ি যাচ্ছিল, তখন অহনার খুব খারাপ লেগেছিলো। বাবাকে আগেও ছাতার কথা বলেছে সে; বাবার নাকি মনে থাকে না। প্রতিদিন অফিস থেকে খালি হাতে ফেরেন।

 

বাবা ফিরতে আজ অনেক রাত হবে হয়তো। বাবা তো ব্যস্ত মানুষ। অফিসের কাজে বাইরে বাইরেই বেশি থাকেন। বেশিরভাগ আব্দার তো মায়ের কাছেই করতে হয়। তারপরও বাবাকে বলেছে। বর্ষায় একটা ছাতা কী দরকার নয়? বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে স্কুলে যাবে? যদি অসুখ করে? তখন বুঝবে সবাই। এজন্যই তো একটা ছাতার কথা বলেছিল।

 

স্কুল থেকে এসে মায়ের কাছে জন্মদিনে কেক কাটার কথা বলেছিলো। তাই শুনে মা শুধু শুধু বকলেন। একদিকে ছাতার কষ্ট অন্যদিকে জন্মদিনে পার্টির কথা বলে ধমক খেয়ে অভিমানটা বেড়েছে।

 

জন্মদিনে সবাই মিলে একটু আনন্দ করবে না? ওর সহপাঠীরা সবাই যার যার জন্মদিনে আনন্দ করে। ক্লাসে বসে যখন গল্প শোনে; তখন খুব খারাপ লাগে। অহনা বেশি কিছু তো চায়নি। দু`চারজন বন্ধু কী বাসায় আসতে পারে না? মায়ের তাতে বারণ।

 

‘বাজে খরচ করা যাবে না। তোমার বাবা বাসায় নেই। আমি কোনো ঝামেলা করতে পারবো না`- মার এক কথা। মনতো খারাপ হবেই।

 

সেই থেকে মন খারাপ অহনার। অহনাকে ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে মায়ের হাতে খেয়ে অপ্সরী ঘুমিয়ে পড়েছে। অহনাকে কয়েকবার খেতে ডাকা হয়েছে। কিন্তু সে যায়নি। অহনাও কম জেদি নয়। যা বলবে; তা তার চা-ই চাই। ফলে এখন একমাত্র বাবাই হয়তো এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

 

মেয়ের জেদের কারণে মাও কিছু বলছেন না। ওর বাবার অপেক্ষাতেই আছেন। দু`বার ফোন করেছেন। মেয়ের অভিমানের কথা বলেছেন। অহনার রুমে একবার উঁকি দিলেন ওর মা। দেখলেন অহনা লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছে। তাই তিনি টিভি রুমে গিয়ে সিরিয়ালে মন দিলেন।

 

রাত তখন সাড়ে এগারোটা। উপজেলা শহরে রাতটা কম নয়। বাবা পাশের উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেন। ফিরতে ফিরতে প্রতিদিনই একটু রাত হয়। বাইরে বাবার মোটরসাইকেলের আওয়াজ আসে অহনার কানে। আওয়াজটা অহনার পরিচিত। আওয়াজ শুনে অভিমানের তীব্রতা বাড়তে থাকে।

 

কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে অহনার মা দরজা খুলে দেন। হাতের প্যাকেটগুলো নিয়ে ওয়্যারড্রবের ওপর রাখেন।
`কী হয়েছে? ঘুমিয়ে পড়েছে?` বাবা জানতে চান।

 

মা বলেন, `আগে যাও ফ্রেস হয়ে এসো।`
`আচ্ছা, তুমি সব রেডি করো` বলে বাবা বাথরুমে ডোকেন।

 

মা প্যাকেটগুলো খুলে টেবিলে সাজান। লাইটটা অফ করে দেন। বাবা ফ্রেস হয়ে অহনার রুমে ডোকেন। সুইচ টিপে লাইট অন করেন। অহনা এবার শক্ত ঘুমের ভান ধরে। যেন সে কিছুই টের পায়নি। জোর করে চোখ দুটি টিপে রাখে।

 

বাবা অহনার বিছানায় গিয়ে মাথার কাছে বসেন। মাথায় হাত বুলান। অহনা হঠাৎ ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে।
`হ্যাপি বার্থডে টু মামণি`। বলতেই অহনা উঠে গিয়ে বাবার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকে।
`কাঁদে না মা, খাবে চলো?` বাবার কথায় রাগ আরো উসকে ওঠে।
`না খাবো না, এই তোমার আসার সময় হলো? এতো ব্যস্ত তুমি? একটা বিশেষ দিনেও তোমাকে কাছে পাই না।`
অহনার কথা শুনে বাবা অহনাকে জড়িয়ে ধরে।
`চলো মা, ডাইনিংয়ে চলো।` এবার বাবার কথায় উঠে দাঁড়ায় অহনা।
অন্ধকার ডাইনিংয়ে গিয়ে দাঁড়াতেই লাইট অন করে দেন মা। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চোখ বুজে আসে অহনার। চোখ খুলেই ছানাবড়া।

 

টেবিলে সাজানো কেক। অহনা এবার হাসে। হাসিতেও চোখে কান্নার জল চলে আসে। চোখ মুছে হাসিমুখে বাবা-মার সঙ্গে জন্মদিনের কেক কাটে।

 

অপ্সরী চোখ কচলাতে কচলাতে এসে বলে, `অ্যা... আমাকে ছাড়াই?` অহনা এক টুকরো কেক তুলে দেয় অপ্সরীর মুখে।
বাবা-মার গালে চুমু খেয়ে অহনা বলে, `তোমরা অনেক ভালো।`
মা অহনাকে চমকে দিয়ে বলে, `এই নাও তোমার জন্মদিনের উপহার।`
`ছাতা!` বলে আনন্দে আত্মহারা অহনা আবার কেঁদে ফেলে।