নাজিবের মামা শৈশব থেকেই চোখে চশমা পরছেন। চশমা ছাড়া তিনি এখন একদম চলতে পারেন না। এমন কি গোসল করতে ঢুকলেও বাথ রুমে চশমা দিয়ে পরে যান। মামার এ চশমা সাধারণ চশমা নয়, অনেক পাওয়ারি চশমা।
নাজিবের জন্মের পরে মামা ওদের বাসায় এই প্রথম বেড়াতে এসেছেন। কারণ মামা আমেরিকা থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর পর দেশে এসেছেন। আসার একদিন পরে মামার চশমা পরার এ বিষয়টি নাজিবের নজরে আসে। মামার চশমা পরার বিষয়টি নাজিবের কাছে অদ্ভুত লেগেছে।
মামা সব সময়ে চশমা পরেন, এ নিয়ে নাজিবের মাঝে কৌতূহলের অন্ত নেই। মামা বাসায় আসার পর থেকে তিনি সব সময় চশমা পরেন কেন? এই নিয়ে নাজিবের হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে মামা প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেছেন।
নাজিব চশমা পরা মানুষ একদম দেখতে পারে না। কারণ চশমা পরা মানুষ তার কাছে পন্ডিত পন্ডিত বলে মনে হয়। এ পন্ডিতরা সব সময় লেখা-পড়ার কথা বলেন। নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার কথা বলেন। নাজিবের স্কুলের গণিত আর বিজ্ঞান স্যারও সব সময় চোখে চশমা দিয়ে থাকেন। এ স্যারদের মেজাজ মর্জি খারাপ হলে চশমার ফাঁক দিয়ে ক্লাসের ছাত্রদের কঠিন কঠিন সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করে থাকেন। নাজিব প্রায়াই স্যারদের এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। বাবাও নাজিবকে পড়ানোর সময় চশমা চোখে দিয়ে থাকেন। এসব কারণে নাজিব চাচ্ছে মামা এখন থেকে আর চশমা পরবে না। মামা তার কাছে বন্ধুর মত থাকবেন। নাজিব মামাকে বার বার চশমা পরতে বারণ করলেও মামা তা শুনছেন না। তাই নাজিব মামার নাম দিয়েছে ‘চশমা মামা’।
অবশ্য নাজিব এ ধরনের নাম দেওয়াতে বেশ পারদর্শী। তার নানা ভাইয়ের না দিয়েছে ‘চুনতি নানা’। কারণ নানা ভাই পানে চুন বেশি খান। চুন খেয়ে খেয়ে মুখের বারোটা বাজিয়েছেন। দাঁতগুলো পাকা জামের মত পোটকা বানিয়েছেন। স্কুলের দপ্তরির নাম দিয়েছে ‘বক বাবুল’। কারণ বাবুল দপ্তরির গলা বকের মত লম্বা। বকের মত সে নুয়ে নুয়ে হাঁটে।
মামা ঢাকাতে আসায় নাজিবের আনন্দে আটখানা অবস্থা। সারাদিন মামার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। রাতে ঘুমাতেও যায় মামার সঙ্গে।
গত রাতে নাজিব মামার সঙ্গে একটা আজব ঘটনা ঘটিয়েছে। মামা টিভি দেখতে দেখতে চশমা খুলে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঘুমানো অবস্থায় নাজিব তার মামার চোখে চশমা পরিয়ে দিয়েছে। ঘুমিয়ে এপিট ওপিট করার সময় তার চোখের চশমা খুলে ঘাড়ের নিজে পড়ে। এতে তার চশমাটি ভেঙ্গে যায়। মামা সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখেন চশমা ভেঙ্গে চৌচির। তার চশমার এ হাল দেখে মনে অনেক কষ্ট পেলেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন-
-আমি তো ঘুমানোর আগে চশমা খুলে ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার ঘাড়ের নিচে চশমাটি এলো কি করে! নিশ্চয়ই নাজিবের কান্ড। ও আমার চশমা নিয়ে খেলতে খেলতে বিছানায় রেখে গেছে। যার কারণে চশমাটার এ অবস্থা হয়েছে। ইস কি দামী চশমা আমার!
মামা বিছানা ছেড়ে উঠে নাজিবের রুমে চলে গেলেন। গিয়ে দেখেন নাজিব ঘুমাচ্ছে তো ঘুমাচ্ছে। মামা তার গায়ে হাত দিয়ে নাড়া দিলেন। নাজিব জাগছে না। এরপর মামা একটু জোরে জোরে ডাক দিলেন। এতে কিছুক্ষণ পরে নাজিবের ঘুম ভাঙ্গলো। বিছানা ছেড়ে নাজিব উঠে দাঁড়ালো।
অনেকটা মেজাজ খারাপ করে নাজিব বললো-
-তুমি আসলেই একটা ‘চশমা মামা’। তোমাকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমার ঘুমটা কেবল আসছিলো। অমনি তুমি জাগিয়ে তুললে। উহ্! কি একটা স্বপ্ন দেখতে ছিলাম। মামা! তুমি আসলেই একটা ‘চশমা মামা’।
ঘুম ভাঙ্গানোর কারণে নাজিব মামাকে ক্ষেপাতে চেষ্টা করলো। মামা ক্ষেপলেন ঠিকই। কিন্তু মামাকে ‘চশমা মামা’ বলার জন্য নয়। চশমা ভাঙ্গার জন্য। মামা বুঝতে পেরেছেন নাজিবই তার চশমা বিছানায় রেখেছে। নাজিবের এ ধরনের কথা তারই প্রমাণ দিচ্ছে। মামা ক্ষেপে গিয়ে বললেন,-
-আমি রাতে ঘুমানোর পরে আমার বিছানায় তুমি চশমা রেখে এসেছো। চশমাটা ঘাড়ের নিচে পড়ে ভেঙ্গে গেছে। আমার বিশ্বাস এই কাজ তুমি ছাড়া কেউ করেনি।
নাজিব চট করে জবাব দেয়,-
-চশমাটা বিছানায় নয়, তুমি ঘুমানোর পরে আমি তোমার চোখে চশমাটা দিয়ে এসেছিলাম।
এই কথা শুনে মামা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। তার কণ্ঠে রাগ ছড়িয়ে বললেন,-
-শোন নাজিব তোমাকে আমি অনেক ভালো ছেলে মনে করে ছিলাম। আর এখন দেখছি ছেলে হিসেবে তুমি একটা বদের হাড্ডি। তুমি জানো, আমার কত বড় ক্ষতি করেছো! এই চশমাটা আমার বন্ধু আমাকে জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলো। আমাকে উপহার দেয়ার জন্য সে এটাকে ইতালি থেকে এনেছিলো। ইতালির চশমা পৃথিবীর সেরা চশমা। এই সেরা চশমাটা তুমি ভেঙ্গে ফেলেছো।
মামা নাজিবের সঙ্গে কথা বলতে চলতে ভাঙ্গা চশমাটি চোখে দিয়েছে। চশমার একটি গ্লাস ও একটি পা ভেঙ্গে গিয়েছে। এখন এই চশমা চোখে পরায় মামাকে অদ্ভুত লাগছে। কিছুটা ভূত মনে হচ্ছে। মামার এই অবস্থা দেখে নাজিবের অনেক হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে হাসি দিলে মামা আরও ক্ষেপে যাবেন। তাই নাজিব হাসি চেপে রাখতে চষ্টা করছে। হাসি চেপে নাজিব বলছে-
-মামা ঘুমানোর পরে তোমার চোখে চশমাটা দেওয়ার কারণ হচ্ছে, তুমি যাতে স্বপ্নটাও ভালোভাবে দেখতে পারো। পরশুদিন তুমি কি স্বপ্নে দেখেছো তা সকালে ভালো করে আমাকে বলতে পারোনি। তাই তুমি যাতে ঘুমিয়ে স্বপ্নটা ভালো করে দেখতে পারো তার জন্য চশমাটা তোমার চোখে দিয়েছি।
নাজিবের এই কথা শুনে মামা পেছন ফিরে কিছু একটা খুঁজছেন ভঙ্গিতে বললেন,-
-দাঁড়াও তোমাকে আমি মজা দেখাচ্ছি।
নাজিব বুঝতে পেরেছে, মামার মেজাজ এখন চরমে। তাই আর কোন কথা না বলে দৌড়ে ফ্রেস রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
চশমা মামা
মিজানুর রহমান মিথুন
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০১৭ , ০৩:৫১ পিএম
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০১৭ , ০৩:৫১ পিএম
